ডিজিটাল মার্কেটার বা উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদের সবারই একটা কমন স্বপ্ন থাকে— "আমার অ্যাডটা এখন ভালো চলছে, প্রতিদিন ১০টা সেল পাচ্ছি। বাজেট দ্বিগুণ করে দিলে নিশ্চয়ই ২০টা সেল পাবো!"
কিন্তু বাস্তবে ঘটে উল্টোটা। বাজেট বাড়ানোর পর দেখা যায় খরচ (CPC/CPM) বেড়ে গেছে, কিন্তু সেলের পরিমাণ কমে গেছে বা আগের মতোই আছে। উল্টো লাভের অংক (ROAS) কমে যাচ্ছে।
![]() |
| বাজেট বাড়ানোর ট্রাপে |
কেন এমন হয়? ফেসবুক কি ইচ্ছা করে টাকা কেটে নিচ্ছে? নাকি আমাদের স্ট্র্যাটেজিতে ভুল? চলুন, অভিজ্ঞতার আলোকে এর পেছনের আসল কারণগুলো জেনে নিই।
১. ‘লো-হ্যাংগিং ফ্রুট’ বা সহজলভ্য ক্রেতা শেষ হয়ে যাওয়া
সবচেয়ে বড় কারণটি হলো অডিয়েন্সের ধরণ। যখন আপনি কম বাজেটে (যেমন $১০/দিন) অ্যাড চালান, ফেসবুকের অ্যালগরিদম খুব স্মার্টলি আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের মধ্যে ‘সবচেয়ে আগ্রহী’ বা ‘কেনার জন্য প্রস্তুত’ এমন মানুষদেরই অ্যাড দেখায়। এদেরকে বলা হয় "Low-hanging fruits"।
কিন্তু যখনই আপনি বাজেট বাড়িয়ে $৫০ বা $১০০ করেন, তখন ওই অল্প সংখ্যক "প্রস্তুত ক্রেতা" শেষ হয়ে যায়। তখন ফেসবুককে বাধ্য হয়ে এমন মানুষদের কাছে অ্যাড নিয়ে যেতে হয়, যারা আপনার প্রোডাক্ট নিয়ে হয়তো অতটা আগ্রহী নয়। এদের কনভার্ট করতে ফেসবুকের বেশি কষ্ট হয়, তাই খরচ বাড়ে কিন্তু কনভার্সন রেট কমে যায়।
২. লার্নিং ফেজ (Learning Phase) রিসেট হওয়া
ফেসবুকের অ্যালগরিদম একটি লার্নিং মেশিনের মতো। সে প্রতিনিয়ত শেখে কাদের কাছে অ্যাডটি ভালো পারফর্ম করছে। যখন আপনি হুট করে বাজেট অনেক বেশি (যেমন ৫০% বা ১০০%) বাড়িয়ে দেন, তখন অ্যালগরিদম একটি ধাক্কা খায়।
সে কনফিউজড হয়ে যায় এবং তার আগের শেখা ডাটা রিসেট হয়ে যেতে পারে। তখন সে আবার নতুন করে ‘Learning Phase’-এ চলে যায়। এই পুনরায় শেখার সময়টায় রেজাল্ট খুব অস্থিতিশীল থাকে এবং খরচ বেড়ে যায়।
৩. অডিয়েন্স ফ্যাটিগ (Audience Fatigue)
বাজেট বাড়া মানেই হলো অ্যাডটি আরও বেশিবার মানুষের সামনে যাওয়া। যদি আপনার অডিয়েন্স সাইজ ছোট হয় এবং বাজেট বেশি হয়, তবে একই মানুষ বারবার আপনার অ্যাডটি দেখবে।
বারবার একই অ্যাড দেখলে মানুষ বিরক্ত হয় (একে বলে Ad Fatigue)। ফলে তারা আর ক্লিক করে না বা অ্যাডটি ইগনোর করে। এতে আপনার ক্লিক রেট (CTR) কমে যায় এবং ফেসবুক মনে করে আপনার অ্যাডটি ভালো না। ফলে সে পেনাল্টি হিসেবে আপনার খরচ (CPM) বাড়িয়ে দেয়।
৪. প্রতিযোগিতামূলক নিলাম (Auction Competition)
ফেসবুক অ্যাড মূলত একটি নিলাম বা অকশন সিস্টেম। কম বাজেটে আপনি হয়তো ছোট ছোট প্রতিপক্ষের সাথে পাল্লা দিচ্ছিলেন। কিন্তু বাজেট বাড়িয়ে যখন আপনি বড় স্কেলে যাচ্ছেন, তখন আপনি বড় বড় ব্র্যান্ড বা বেশি বাজেটের মার্কেটারদের সাথে বিড করছেন।
বড় পুকুরে বড় মাছের সাথে পাল্লা দিতে গেলে খরচ একটু বাড়বেই। তাই হাই বাজেটে লিড বা সেল প্রতি খরচ (CPA) লো বাজেটের তুলনায় সাধারণত বেশি হয়।
তাহলে সমাধান কী? (Expert Solutions)
বাজেট বাড়ালেই লস হবে—ব্যাপারটা এমন নয়। সঠিক উপায়ে স্কেলিং করলে প্রফিট ধরে রাখা সম্ভব। অভিজ্ঞরা নিচের পদ্ধতিগুলো মেনে চলেন:
- ধীরগতিতে এগোনো (The 20% Rule): হুট করে বাজেট দ্বিগুণ করবেন না। প্রতি ২-৩ দিন পর পর বাজেট ১০% থেকে ২০% করে বাড়ান। এতে অ্যালগরিদম কনফিউজড হয় না। (আপনার সেট করা অটোমেটেড রুলটি এক্ষেত্রে পারফেক্ট!)
- হরাইজন্টাল স্কেলিং (Horizontal Scaling): শুধু এক ক্যাম্পেইনের বাজেট না বাড়িয়ে, নতুন নতুন অডিয়েন্স বা ইন্টারেস্ট টেস্ট করুন। অথবা ভালো চলা অ্যাডটি দিয়ে নতুন একটি ক্যাম্পেইন চালু করুন।
- ক্রিয়েটিভ পরিবর্তন করা: বাজেট বাড়ালে অবশ্যই নতুন ছবি বা ভিডিও (Ad Creative) ব্যবহার করতে হবে। এক ডিজাইনে বেশিদিন স্কেলিং করা যায় না।
- অডিয়েন্স বড় করা: বাজেট বেশি হলে আপনার অডিয়েন্স সাইজও বড় (Broad) রাখতে হবে, যাতে ফেসবুক খেলার জন্য বড় মাঠ পায়।
ফেসবুক মার্কেটিংয়ে "বাজেট বাড়ালেই সেল বাড়বে"—এই অংকটি সরলরৈখিক নয়। স্কেলিং একটি ধৈর্যের খেলা। আপনার অটোমেটেড রুলস এবং সঠিক মনিটরিং ব্যবহার করে ধীরে ধীরে বাজেট বাড়ান, তাহলেই খরচ নিয়ন্ত্রণে রেখে সেল বাড়ানো সম্ভব হবে।
অটোমেটেড রুলস ক্রিয়েট করে আপনার এড এর সঠিক স্কেলিং করা সম্ভব। কোনো বিষয়ে জানার ও পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন।
লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন, যাতে অন্যরাও সতর্ক হতে পারে।
কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন যা হোয়াটসএপে যোগাযোগ করুন +8801645491118
